• আইন আদালত

    হোলি আর্টিজান মামলা: মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের সাজা কমিয়ে আমৃত্যু কারাদণ্ড দিলেন হাইকোর্ট

      এম এন বি।। ৩০ অক্টোবর ২০২৩ , ১:১৪:১৭ প্রিন্ট সংস্করণ

    এম,এন,বিঃরাজধানীর গুলশানে হোলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত সাত আসামির সাজা কমিয়ে আমৃত্যু কারাদণ্ড দিয়েছেন হাইকোর্ট।

    আসামিদের আপিল ও ডেথ রেফারেন্সের ওপর শুনানি শেষে সোমবার এ রায় দেন বিচারপতি সহিদুল করিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের বেঞ্চ।

    এর আগে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত সাতজনের ডেথ রেফারেন্স চলতি বছরের জানুয়ারিতে শুনানির জন্য কার্যতালিকায় ওঠে। এরপর গত ৩ মে থেকে শুনানি শুরু হয়। গত ১১ অক্টোবর শুনানি শেষে রায়ের জন্য ৩০ অক্টোবর দিন রাখা হয়।

    ২০১৯ সালের ২৭ নভেম্বর হলি আর্টিজান মামলার রায় ঘোষণা করেন ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনাল। রায়ে মামলার আট আসামির মধ্যে সাতজনের মৃত্যুদণ্ড দেন বিচারক। একজন খালাস পেয়েছেন।

    মৃত্যুদণ্ড পাওয়া আসামিরা হলেন- আসলাম হোসেন ওরফে রাশেদ ওরফে র‌্যাশ, রাকিবুল ইসলাম ওরফে রিগ্যান, জাহাঙ্গীর আলম ওরফে রাজীব গান্ধী, হাদিসুর রহমান ওরফে সাগর, আবদুস সবুর খান ওরফে সোহেল মাহফুজ ওরফে হাতকাটা মাহফুজ, শরিফুল ইসলাম খালেদ ও মামুনুর রশিদ। আর খালাস দেয়া হয়েছে মিজানুর রহমান ওরফে বড় মিজানকে।

    গুলশান হামলার তদন্তে মোট ২১ জনকে চিহ্নিত করা হলেও তাদের মধ্যে জীবিত অবস্থায় গ্রেপ্তার আটজনকেই কেবল বিচারের মুখোমুখি করা সম্ভব হয়।

    ২০১৬ সালের ১ জুলাই গুলশানের ওই রেস্তোরাঁয় ১৭ বিদেশিসহ ২০ জনকে গলাকেটে ও গুলি চালিয়ে হত্যা করে নব্য জেএমবির জঙ্গিরা। হামলা ঠেকাতে গিয়ে নিহত হন দুই পুলিশ কর্মকর্তা। পরে কমান্ডো অভিযানে হামলাকারী হিসেবে চিহ্নিত পাঁচ তরুণের সবাই মারা পড়েন।

    দেশ-বিদেশে আলোড়ন সৃষ্টিকারী এই ঘটনার পর গুলশান থানার উপ-পুলিশ পরিদর্শক (এসআই) রিপন কুমার দাস বাদী হয়ে একটি মামলা করেন। হামলার আড়াই বছরের মাথায় গত বছরের ২৩ জুলাই আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় পুলিশ। এরপর ওই বছরের ২৬ নভেম্বর আট আসামির বিরুদ্ধে হোলি আর্টিজানে অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় মামলার বিচার। এক বছরে রাষ্ট্রপক্ষ এই মামলায় ১১৩ জন সাক্ষী হাজির করেছে।

    দণ্ডিতদের বিরুদ্ধে যত অভিযোগ

    জাহাঙ্গীর আলম: জাহাঙ্গীরের বাড়ি গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার পশ্চিম রাঘবপুরে। তাকে গ্রেপ্তার করা হয় ২০১৭ সালের ১৩ জানুয়ারি। গুলশান হামলা ঘটাতে জাহাঙ্গীরের ‘গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা’ ছিল বলে মামলার অভিযোগপত্রে বলা হয়। হামলার পরিকল্পনায় অংশগ্রহণ থেকে শুরু করে প্রশিক্ষণ, অস্ত্র সংগ্রহ, হত্যাকাণ্ডে সক্রিয় সহায়তার অভিযোগ আনা হয়েছে জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে। আত্মপক্ষ সমর্থনে আদালতে দেয়া জবানবন্দিতে জাহাঙ্গীর জঙ্গি সংগঠনে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন। তবে গুলশান হামলায় যুক্ত ছিল না বলে দাবি করেছেন।

    রাকিবুল হাসান রিগ্যান: জঙ্গিসংগঠনগুলোতে রাফিউল ইসলাম রাফি, রিপন, হাসান, অন্তর নামেও তিনি পরিচিত। তার বাড়ি বগুড়া সদর উপজেলার ইসলামপুর পশ্চিমপাড়ায়। অভিযোগপত্রে বলা হয়, রিগেন নব্য জেএমবির প্রশিক্ষক ছিলেন, অর্থ লেনদেনের দায়িত্বও ছিল তার। নিষিদ্ধ সংগঠনের পদ গ্রহণ করে অর্থ গ্রহণ, হামলায় জড়িতদের প্রশিক্ষণ দিয়ে হত্যাকাণ্ড সংঘটনে সহায়তা ও প্ররোচিত করার অভিযোগ আনা হয়েছে তার বিরুদ্ধে।

    আব্দুস সবুর খান হাসান: সবুর খান বেশ কয়েকটি নামে পরিচিত। সেগুলো হচ্ছে সোহেল মাহফুজ, মুসাফির, জয়, নসুরুল্লাহ। তার বাড়ি কুষ্টিয়ার কুমারখালীর সাদিপুর কাবলিপাড়ায়। ২০১৭ সালের ৮ জুলাই গ্রেপ্তার হন সবুর। গুলশান হামলায় লোক, অস্ত্র, গ্রেনেড সরবরাহ করে হত্যাকাণ্ড সংঘটনের অভিযোগ আনা হয়েছে সবুর ওরফে সোহেল মাহফুজের বিরুদ্ধে।

    হাদিসুর রহমান: হাদিসের বাড়ি জয়পুরহাট সদর উপজেলার কাদোয়া কয়রাপাড়া। ২০১৮ সালের ২১ মার্চ বগুড়ার শিবগঞ্জে গ্রেপ্তার করা হয়। গুলশান হামলাকারীদের ঝিনাইদহে মেস ভাড়া করে আশ্রয় ও প্রশিক্ষণ দেয়া, অর্থ লেনদেন, অস্ত্র-গ্রেনেড সরবরাহ করে হত্যাকাণ্ডে সহায়তার অভিযোগ আনা হয়েছে হাদিসুরের বিরুদ্ধে।

    শরিফুল ইসলাম খালেদ: শরিফুলের বাড়ি রাজশাহীর বাগমারার শ্রীপুরের খামারপাড়ায়। ২০১৯ সালের ২৫ জানুয়ারি চাঁপাইনবাবগঞ্জে গ্রেপ্তার হয়। অভিযোগপত্রে বলা হয়, হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলার পরিকল্পনাকারীদের একজন শরিফুল। আত্মঘাতী হামলার জন্য জন্য তরুণদের তৈরির কথা তিনিই বলেছিলেন। গাইবান্ধায় যমুনার চরে জঙ্গিদের প্রশিক্ষণ শিবির চালাতেও তার ভূমিকা ছিল।

    আসলাম হোসেন সরদার: আসলামের রাজশাহীর পবার নওহাটা মথুরায়। ২০১৭ সালের ২৮ জুলাই গ্রেপ্তার করা হয় তাকে। হামলাকারীদের প্রশিক্ষকের কাছে পৌঁছে দেয়া এবং অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ দেয়া, ঘটনাস্থল রেকি, হামলার পরিকল্পনায় অংশ নিয়ে হত্যাকাণ্ডে প্ররোচনা দেয়ার অভিযোগ করা হয়েছে আসলামের বিরুদ্ধে।

    মামুনুর রশিদ রিপন: রিপন নামে তিনি পরিচিত ছিলেন সংগঠনে। বাড়ি বগুড়ার নন্দীগ্রামের শেখের মাড়িয়ায়। গাজীপুরের বোর্ডবাজার থেকে ২০১৯ সালের ২০ জানুয়ারি গ্রেপ্তার হন। গুলশান হামলায় পরিল্পনার বৈঠকে অংশ নেওয়া এবং অস্ত্র সরবরাহের অভিযোগ করা হয়েছে রিপনের বিরুদ্ধে।

    আরও খবর

    Sponsered content