• আন্তর্জাতিক

    ভারতে ফিলিস্তিন সমর্থকদের ব্যাপক হয়রানি

      অনলাইন ডেস্ক ।। ২৫ অক্টোবর ২০২৩ , ১০:১০:৫৪ প্রিন্ট সংস্করণ

    আহমেদাবাদ শহরের একটি মসজিদের বাইরে ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে বিভিন্ন মুসলিম সংগঠনের আয়োজিত বিক্ষোভ থেকে এক ব্যক্তিকে আটক করে পুলিশ/রয়টার্স

    অবরুদ্ধ গাজায় উপত্যকায় দুই সপ্তাহ ধরে ইসরায়েলের টানা বোমাবর্ষণে অন্তত ছয় হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যার মধ্যে এক তৃতীয়াংশ শিশু। এই ঘটনায় বিশ্ব জুড়ে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে বিক্ষোভ করছেন বহু দেশের নাগরিকরা।

    আরবের বাইরের প্রথম দেশ হিসেবে ভারত প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশনকে (পিএলও) স্বীকৃতি দিয়েছিল। তবে এবারে সংঘাত শুরু হলে গত ১৪ অক্টোবর ভারতের প্রধানমন্ত্রী এই যুদ্ধের নিন্দা জানানোর পাশাপাশি ইসরায়েলের প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করেন। এমনকি নয়াদিল্লি প্রশাসন নিজেদের যেসব নাগরিক ফিলিস্তিনকে সমর্থন জানাচ্ছে তাদেরকেও হয়রানি করছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

    গাজায় হামলা শুরুর কয়েকদিনের মধ্যেই “আমি ফিলিস্তিনের সাথে আছি” এমন লেখা ছবি থাকায় ভারতের সবচেয়ে জনবহুল উত্তর প্রদেশ রাজ্যের হামিরপুর জেলার মুসলিম ব্যক্তিত্ব আতিফ চৌধুরী এবং সুহেল আনসারির বিরুদ্ধে অভিযোগ করে।

    তাদের বিরুদ্ধে সামাজিক গোষ্ঠীর মধ্যে শত্রুতা প্রচারের অভিযোগ আনা হয়েছে। আনসারিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে আতিফ চৌধুরী পলাতক রয়েছেন।

    গাজা আক্রমণ শুরুর একদিন পরে ক্যাম্পাসে ফিলিস্তিনপন্থী মিছিল করায় হিন্দু জাতীয়তাবাদী ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) শাসিত উত্তর প্রদেশের আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের চার ছাত্রের বিরুদ্ধে মামলা করে।

    একই রাজ্যে ইসরায়েল-পন্থী মিছিল বের করে হিন্দু উগ্র-ডানপন্থী সংগঠন বজরং দল। তবে তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি কর্তৃপক্ষ।

    এসব ঘটনা ছাড়াও ভারত জুড়ে বিজেপি ফিলিস্তিনকে সমর্থন জানানো সংগঠন ও ব্যক্তিকে নানাভাবে হয়রানি করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

    ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশে ছাত্র সংগঠন, শিক্ষার্থী ও নাগরিকদের আয়োজিত সমাবেশ থেকে কয়েকজনকে আটক করা হয়।

    আঞ্চলিক একটি দলের সঙ্গে জোট করে বিজেপির শাসিত পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য মহারাষ্ট্রে গাজা যুদ্ধের বিরুদ্ধে মিছিল করার অভিযোগে রুচির লাড ও সুপ্রীত রাভিশ নামে দুই ব্যক্তিকে গত ১৩ অক্টোবর গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাদের বিরুদ্ধে বেআইনি সমাবেশের অভিযোগ আনা হয়েছে।

    মহারাষ্ট্রের রাজধানী মুম্বাইয়ে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভের অন্যতম সংগঠক ভারতের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সদস্য পূজা চিনচোল আল জাজিরাকে বলেন, “আমরা ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষোভের আয়োজন করছি, এই বিষয়টি জানতে পেরে পুলিশ আমাদের সামনে অনেক বাধা তৈরি করেছিল।”

    “তারা বিক্ষোভের একদিন আগে একজন সংগঠককে ও প্রতিবাদের সকালে তিনজন সংগঠককে আটক করে। আমরা যখন প্রতিবাদ করতে জড়ো হলাম, তখন তারা আমাদের মাইক্রোফোন, প্ল্যাকার্ড ছিনিয়ে নেয় ও কিছুক্ষণ পর আমাদের কয়েকজনের ওপর শক্তি প্রয়োগ করা শুরু করে,” তিনি বলেন।

    বিজেপি শাসিত রাজ্য ছাড়াও অন্যান্য অঞ্চলেও একই ঘটনা ঘটেছে।

    ভারতের প্রধান বিরোধী কংগ্রেস শাসিত দক্ষিণের কর্ণাটক রাজ্যের রাজধানী বেঙ্গালুরুতে ১৬ অক্টোবর ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে একটি নীরব মিছিলের আয়োজন করা হয়। এর জেরে জনসাধারণের সমস্যা সৃষ্টির অভিযোগ তুলে ১০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

    হোয়াটসঅ্যাপে হামাসের সমর্থনে একটি ভিডিও পোস্ট করার অভিযোগে ৫৮ বছর বয়সী এক মুসলিম ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে কর্ণাটক পুলিশ।

    ফিলিস্তিনি পতাকা ও “ফিলিস্তিন দীর্ঘজীবী হোক” বার্তাসহ হোয়াটসঅ্যাপ স্ট্যাটাস দেওয়ায় সরকারী কর্মচারী আলম নওয়াজকে আটক করে পুলিশ।

    ২০ বছর বয়সী নওয়াজ আল জাজিরাকে বলেন, “আমাকে অনেকেই সন্দেহের চোখে দেখতে শুরু করেছে। যেন আমি ফিলিস্তিনি জনগণের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে কিছু অপরাধ করেছি।”

    কংগ্রেস “ফিলিস্তিনি জনগণের ভূমি, স্ব-শাসন এবং মর্যাদার সাথে বসবাসের অধিকার”-এর প্রতি সমর্থন জানিয়েছে। এছাড়া ৯ অক্টোবর দলের ওয়ার্কিং কমিটির সভায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে প্রস্তাব পাস করা হয়েছে।

    আরও খবর

    Sponsered content