• সারাদেশ

    নেই বা হাত, দুই আঙুলেই চলে একরামুলের সংসার

      রংপুর প্রতিনিধি ১৮ অক্টোবর ২০২৩ , ৯:১০:৫৮ প্রিন্ট সংস্করণ

    জন্ম থেকেই বাঁ হাত নেই। আকারে ছোট ডান হাতে আঙুলও মাত্র দুটি। দুই আঙুল দিয়ে পরীক্ষার খাতায় লিখে এসএসসি (ম্যাট্রিক) পাস করেছেন। এরপর কলেজে ভর্তি হলেও পারিবারিক অসচ্ছলতায় পড়ালেখা বন্ধ হয়ে যায়। দুই আঙুলে জীবনসংগ্রামে বহু বাধা এলেও থেমে যাননি। এই সীমাবদ্ধতা নিয়েই চালাচ্ছেন চা-পানের দোকান। বলছিলাম ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলার পূর্ব মল্লিকপুর গ্রামের শারীরিক প্রতিবন্ধী একরামুল হকের (২২) গল্প।

    গতকাল মঙ্গলবার (১৭ অক্টোবর) একরামুলের চায়ের দোকানে কথা হয় তাঁর সঙ্গে। তিনি জানালেন, দুই ভাই দুই বোনের মধ্যে সবার ছোট তিনি। দুই বোনের বিয়ে হয়েছে আর বড় ভাইও বিয়ে করে আলাদা সংসার করছেন। বাবা নজিব উদ্দিন পেশায় দিনমজুর আর মা রাহেলা বেগমও অন্যের বাড়িতে কাজ করেন। একরামুল বিয়ে করায় সংসার থেকে তাঁর বাবা আলাদা করে দিয়েছেন। বাবার কাছ থেকে একটি টিনের ঘর পেয়েছেন। জায়গা-জমি কিছু নেই। বাড়ির পাশে এক ব্যক্তির জমিতে চা-পানের দোকান করে সংসার চালাচ্ছেন।

    স্থানীয় জাবরহাট হেমচন্দ্র উচ্চবিদ্যালয় থেকে মানবিক বিভাগ থেকে এসএসসিতে জিপিএ ২.৮৮ নিয়ে ২০১৮ সালে একরামুল এসএসসি পাস করেন।

    তিনি বলেন, সংসারের অভাব-অনটনের কারণে এসএসসি পাসের পর কলেজে ভর্তি হলেও পড়াশোনা করা সম্ভব হয়নি। এরপর দুলাভাইয়ের সঙ্গে ঢাকায় যান। সেখানে একটি দোকানে দুই বছর কাজ করেন। ঢাকায় থাকাকালে একটি মেয়ের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক হয়।

    একরামুল বলেন, সে আমাকে পছন্দ করেই বিয়ে করে। এখন তাকে নিয়ে সংসার করছি। দোকানের পুঁজিটা নিজের নয় জানিয়ে তিনি বলেন, ব্র্যাক ব্যাংক থেকে ৭০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে দুটি ছাগল কেনেন আর দোকান দেন। দোকানের আয় থেকে প্রতি মাসে ৭ হাজার টাকা ওই ঋণের কিস্তি দিতে হয়। বাকি টাকা দিয়ে সংসার চালাতে হয়।

    এর বাইরে সরকার থেকে প্রতিবন্ধী ভাতা পান জানিয়ে একরামুল বলেন, ‘স্ত্রী আর ১৬ মাসের মেয়েকে নিয়ে ওই টাকা দিয়ে আমাদের চলতে হয়। আমরা অনেক কষ্ট করে সংসার চালাই।

    এসএসসি পাস করা একরামুল আরও বলেন, তিনি পড়তে ও লিখতে পারেন। ছোটখাটো একটা চাকরি পেলে পরিবারের খরচ নিয়ে আর চিন্তা করতে হতো না।

    একরামুলের স্ত্রী ঈশা আক্তার বলেন, ভালোবেসে তাঁকে বিয়ে করেছি। যতটুকু পারছি, স্বামীকে সহযোগিতা করছি। আমাদের একটা মেয়েও হইছে। সংসারের খরচ বেড়েছে। আমার স্বামী এই দুইটা আঙুল দিয়ে কাজ করে কষ্ট করে সংসার চালাচ্ছেন। সরকার বা কেউ যদি সহযোগিতা করত, তাহলে আমাদের কষ্টের সংসার সুখের হতো।

    আরও খবর

    Sponsered content