• সারাদেশ

    জয়পুরহাটে নির্মাণের ছয় মাসের মধ্যেই ৪৫ কোটি টাকার সড়কে খানাখন্দ

      জয়পুরহাট প্রতিনিধি।। ২২ অক্টোবর ২০২৩ , ১:০৬:২৩ প্রিন্ট সংস্করণ

    জয়পুরহাট শহরের জিরো পয়েন্ট থেকে পাঁচবিবি, হিচমী থেকে পুরানাপৈল ও পাঁচবিবি থেকে হিলি মহাসড়ক উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ২৬ কিলিমিটার সড়ক পাকাকরণের জন্য প্রায় ৪৫ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে। অথচ সড়ক পাকাকরণের ছয় মাস না যেতেই জিরো পয়েন্ট থেকে পাঁচবিবি পর্যন্ত সড়কে ছোটবড় অসংখ্য গর্তের সৃষ্টি হয়েছে।

    সরেজমিনে দেখা গেছে, জয়পুরহাট থেকে হিলি সড়কের জিরো পয়েন্ট থেকে পাঁচবিবি পর্যন্ত সড়কে অন্তত ৩০টি স্থানে পিচ উঠে ছোটবড় খানাখন্দ হয়েছে। আবার কোথায়ও সড়কের ছোট-ছোট পাথর উঠে যাচ্ছে। খানাখন্দের কারণে যানবাহন বেশি গতিতে চলাচল করতে পারছে না। জিরো পয়েন্ট, বিশ্বাসপাড়া, পারুলিয়া-গণকবাড়ি, পুরানাপৈল এলাকার অংশে ১২ থেকে ১৫টি স্থানে বড় বড় খানাখন্দ রয়েছে। এই অংশের বিশ্বাসপাড়া এলাকার ৫ থেকে ৬টি স্থানে পাথর মিশ্রিত বালু দিয়ে খানাখন্দ ভরাট করা হয়েছে।

    জানা গেছে, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এমএম বিল্ডার্স ৪৪ কোটি ৯৬ লাখ ৭৮ হাজার টাকা ব্যয়ে ২৬ কিলোমিটার সড়ক পাকাকরণের কাজ পায়। তিন বছর সাড়ে চার মাস কাজের মেয়াদ থাকলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজটি শেষ করতে পারেনি। চলতি বছরের এপ্রিল মাসে কাজ শেষ করা হয়েছে। কাজ শেষ হওয়ার ছয় মাস না যেতেই সড়কের বিভিন্ন স্থানে খানাখন্দের সৃষ্ট হতে শুরু করেছে। এসব স্থানে পাথর মিশ্রিত বালু দিয়ে খানাখন্দ আড়াল করার চেষ্টা করছে সড়ক বিভাগ।

    এত কম সময়ের মধ্যে সড়কের এমন দশা হওয়ায় নিম্নমানের কাজ হয়েছে বলে অভিযোগ করছেন স্থানীয়রা। তারা বলছেন, ঈদুল ফিতরের আগে সড়কটি পাকাকরণের কাজ শেষ করা হয়। কিছু দিন আগে শহর থেকে পাঁচবিবি পর্যন্ত সড়কের বিভিন্ন স্থানে পিচ উঠতে শুরু করে। গত কয়েক দিনের বৃষ্টির পর সড়কের পিচ উঠে খানাখন্দের সৃষ্টি হয়। এসব খানাখন্দে বৃষ্টির পানি জমে থাকছে। খানাখন্দের কারণে যানবাহনগুলো ঠিকমতো চলাচল করতে পারছে না।

    জয়পুরহাট-পাঁচবিবি সড়কের গণকবাড়ি বাজারের কাঠ ব্যবসায়ী তফিকুল বলেন, ছয় মাস আগে এই সড়কের পিচ ঢালাই করা হয়েছে। এর মধ্যে জয়পুরহাটের বিশ্বাসপাড়া মহল্লা থেকে পাঁচবিবি পর্যন্ত সড়কের বিভিন্ন স্থানে পিচ উঠে ছোটবড় খানাখন্দ সৃষ্টি হয়েছে। এতো অল্প সময়ের মধ্যে যদি রাস্তা নষ্ট হয় তাহলে কোটি কোটি টাকা অপচয় ছাড়া কিছুই নয়।

    ব্যাটারিচালিত ভ্যান চালক বাসুদেব বলেন, এইতো কয়েক মাস আগে সড়কের কাজ করলো। এর মধ্যে গর্ত হয়েছে। ভ্যান চালানোর সময় সাবধানে চালাতে হচ্ছে।

    বাসচালক শহিদুল ইসলাম বলেন, জয়পুরহাট থেকে হিলি পর্যন্ত সড়কের অনেক স্থানে খানাখন্দ হয়েছে। এর মধ্যে জয়পুরহাট থেকে পাঁচবিবি পর্যন্ত খানাখন্দের সংখ্যা বেশি। কাজ শেষ করার ছয় মাসের মধ্য যদি সড়কের এই অবস্থা হয় তাহলে তো আরও দিন পড়ে আছে।

    জয়পুরহাট সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ৪৪ কোটি ৯৬ লাখ ৭৮ হাজার টাকা ব্যয়ে ২৬ কিলোমিটার সড়ক পাকাকরণের কাজ করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এম এম বিল্ডার্স। কাজের মেয়াদ ছিল ২০১৯ সালের ১৭ জুন থেকে ২০২২ সালের ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজটি শেষ করতে পারেনি। চলতি বছরের এপ্রিল মাসে কাজ শেষ করা হয়।

    এ বিষয়ে জয়পুরহাট সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী জয় কিশোর রায় বলেন, সড়কে নিম্নমানের কাজ হয়নি। তদারকিরও কমতি ছিল না। সড়কের পিচ ঢালাইয়ের কাজের সময় হয়তো ডিজেল পড়েছে অথবা কাজের সময় ওই স্থানগুলোতে গাড়ি দাঁড়িয়ে ছিল। এ কারণে সেইসব স্থানে পিচ উঠে খানাখন্দ হয়েছে। এছাড়া ওই সড়কে ভারী যানবাহন চলাচল করে। সড়কের কয়েকটি গতিরোধক রয়েছে। সেখানে যানবাহন এসে ব্রেক করে। এ কারণে সড়কের পিচ উঠে খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে। আমরা কয়েকটি খানাখন্দ ভরাট করেছি। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে সড়কের খানাখন্দ মেরামত করতে বলা হয়েছে। তারা দ্রুত মেরামতের কাজ শুরু করবে।

    জানতে চাইলে এমএম বিল্ডার্সের প্রকল্প ব্যবস্থাপক নাসিরুল্লাহ বলেন, আমরা সড়কের খানাখন্দের বিষয়টি জেনেছি। দ্রুত খানাখন্দ মেরামত করা হবে। সড়কে নিম্নমানের কাজ করা হয়নি। এমনটি (খানাখন্দ) কেন হলো তা বলতে পারছি না।

    আরও খবর

    Sponsered content