আজকের খবর ৩ মে ২০২৪ , ১০:৩৮:২৬ প্রিন্ট সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদকঃবিশ্বের ১৮০টি দেশের মধ্যে ১৬৫তম অবস্থানে বাংলাদেশে। শুধুমাত্র আফগানিস্তান ছাড়া দক্ষিণ এশিয়ার সবগুলো দেশের পরে এই অবস্থান। এটি বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবসের সূচক। ২০২৪ সালের সূচকে ২ ধাপ পিছিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান প্রায় তলানিতে পৌঁছেছে।
৩ মে (শুক্রবার) বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস উপলক্ষে এই সূচক প্রকাশ করেছে রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স। এই সূচকে গত বছরের তুলনায় আরও দুই ধাপ পেছাল বাংলাদেশে। এ নিয়ে ১৪ বছরে ৪২ ধাপ পিছিয়েছে বাংলাদেশ।
দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে শুধু আফগানিস্তানের চেয়ে এগিয়ে আছে বাংলাদেশ। সূচকে ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ, নেপাল ও ভুটানের পেছনে বাংলাদেশের অবস্থান।
গণমাধ্যম সূচকের মোট ১০০ পয়েন্টের মধ্যে বাংলাদেশ পেয়েছে ২৭ দশমিক ৬৪। গত বছর তা ছিল ৩৫ দশমিক ৩১। সেবার অবস্থান ছিল ১৬৩।
২০২২ সালে ৩৬ দশমিক ৬৩ পয়েন্ট নিয়ে ১৬২তম অবস্থানে এবং ২০২১ সালে ৫০ দশমিক ২৯ পয়েন্ট নিয়ে ১৫২তম অবস্থানে ছিল বাংলাদেশ।
দক্ষিণ এশিয়ায় গণমাধ্যমের স্বাধীনতার দিক দিয়ে এবার শীর্ষস্থান দখল করেছে নেপাল; ৬০ দশমিক ৫২ পয়েন্ট নিয়ে দেশটি ৭৪তম অবস্থান দখল করেছে। এর পরের অবস্থানে আছে মালদ্বীপ। ৫২ দশমিক ৩৬ পয়েন্ট নিয়ে দেশটি ১০৬তম অবস্থানে।
এবারের তালিকায় প্রথম অবস্থান থেকে ছিটকে তৃতীয় স্থান পেয়েছে ভুটান। ৩৭ দশমিক ২৯ পয়েন্ট নিয়ে দেশটি ১৪৭তম অবস্থানে রয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ার চতুর্থ, পঞ্চম ও ষষ্ঠ অবস্থানে রয়েছে যথাক্রমে শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান ও ভারত। এই তিন দেশের বৈশ্বিক অবস্থান যথাক্রমে ১৫০, ১৫২ ও ১৫৯তম।
গত বছরের ১৬১ থেকে দুই ধাপ এগিয়ে এবার ১৫৯তম অবস্থান পেয়েছে ভারত।
আফগানিস্তান দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সর্বশেষ স্থান পেয়েছে। ২৬ ধাপ পিছিয়ে দেশটির বৈশ্বিক অবস্থান ১৭৮তম, পয়েন্ট মাত্র ১৯ দশমিক ০৯।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, সাংবাদিকতার চ্যালেঞ্জের দিক দিয়ে গোটা বিশ্বে এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চল দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। গণমাধ্যমকর্মীদের জন্য সবচেয়ে বিপজ্জনক কর্মস্থল হিসেবে মিয়ানমার, চীন, উত্তর কোরিয়া, ভিয়েতনাম ও আফগানিস্তানের নাম উল্লেখ করা হয়েছে এই প্রতিবেদনে।
বৈশ্বিক সূচকে শীর্ষস্থান অটুট রেখেছে নরওয়ে। তাদের পয়েন্ট ৯১ দশমিক ৮৯। শীর্ষ দশের বাকি দেশগুলো হলো ডেনমার্ক, সুইডেন, নেদারল্যান্ডস, ফিনল্যান্ড, এস্তোনিয়া, পর্তুগাল, আয়ারল্যান্ড, সুইজারল্যান্ড ও জার্মানি।
বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম সূচকের মাধ্যমে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও অঞ্চলের সাংবাদিকরা কতটুকু স্বাধীনভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করেন, তা যাচাই করা
এই সূচকে পাঁচটি বিষয় আমলে নেওয়া হয়। এগুলো হলো—রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট, আইনি অবকাঠামো, অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট, আর্থ-সামাজিক অবস্থা ও নিরাপত্তা।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, সারা বিশ্বের মুক্ত গণমাধ্যম রাজনৈতিক কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে হুমকির মুখোমুখি হচ্ছে, যাতে রাজনৈতিক সূচকের উল্লেখযোগ্য হ্রাস থেকে নিশ্চিত হয়েছে। এ বছর এই সূচকের বৈশ্বিক গড় সাত দশমিক ছয় শতাংশ কমেছে।
বিট্রিশ গণমাধ্যম বিবিসি বাংলাকে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে আর্টিকেল নাইনটিনের দক্ষিণ এশিয়া আঞ্চলিক পরিচালক শেখ মনজুর-ই-আলম বলেন, ‘বাংলাদেশে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে জবাবদিহিতার সংকট তৈরি হয়েছে এবং বিষয়টির রাজনৈতিক চেহারা দেয়া হচ্ছে। আমরা অপরাধকে অপরাধ হিসেবে দেখতে পারছি না। এই যে সামগ্রিকভাবে অসহিষ্ণুতা তৈরি হয়েছে, যেটা আসলে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে। তাতে আরও রসদ জুগিয়েছে নিবর্তনমূলক বিভিন্ন আইন।’
সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশ নিষেধাজ্ঞা নিয়ে তুমুল বিতর্ক তৈরি হয়েছে। এ বিষয়ে বিবিসি বাংলার সঙ্গে কথা বলেন বাংলাদেশে বাণিজ্য-অর্থনীতি বিষয়ক সাংবাদিকদের সংগঠন ইকোনমিক রিপোর্টাস ফোরামের জেনারেল সেক্রেটারি আবুল কাশেম।
বিবিসি বাংলাকে তিনি বলেন, ‘সাংবাদিকরা তথ্য সংগ্রহে বাধার মুখে পড়ছেন। এখন পর্যন্ত যেসব জায়গায় সাংবাদিকদের ঢুকতে বাধা আসছে, সেখানে কোথাও কিন্তু ভুল নিউজের কারণে এটা হয়নি। বরং তারা একটা জিনিস গোপন রাখতে চেয়েছে, সেটা সাংবাদিকরা প্রকাশ করে দিয়েছে। সে কারণে সাংবাদিকদের অ্যাকসেসটা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বা হচ্ছে।’
সাংবাদিক নেতা আবুল কাশেম আরও বলেন, ‘নানামুখী কারণে সরকার বা রাষ্ট্র সংশ্লিষ্ট কোনো কোনো তথ্য প্রকাশের ক্ষেত্রে চাপের মুখোমুখি হচ্ছেন অনেক সাংবাদিক। তবে ইদানিং সরাসরি সরকার সংশ্লিষ্ট নয় এমন চাপও আসছে।’
তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর দিক থেকেও এই চাপ ক্রমাগত বাড়ছে। বাংলাদেশের অনেক ব্যবসায়ী গ্রুপ আছে যারা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তালিকায় ঋণ খেলাপি। কিংবা নানা অনিয়মের মাধ্যমে অনেক ব্যবসায়ী ব্যাংক থেকে ঋণের নামে টাকা বের করে নিয়ে যাচ্ছে। এসব ব্যবসায়ী গোষ্ঠী নিয়ে সংবাদ করতে চাইলে নানা ধরণের চাপ আসে বলে সাংবাদিকরা অভিযোগ করছেন।’
আবুল কাশেম বলেন, আপনি যখন সংবাদের নিয়ম অনুযায়ী ঐ ব্যবসায়ীর মন্তব্য নেয়ার জন্য যোগাযোগ করবেন, তখন দুই/তিন মিনিটের মধ্যেই বিভিন্ন এজেন্সি থেকে ফোন চলে আসে। সংবাদপত্র অফিসের সম্পাদক বা শীর্ষ পর্যায়ে ফোন করে বলা হয় যে রিপোর্টটা করা যাবে না। এ ধরণের প্রেশার এখন আছে এবং এটা দিনদিন বাড়ছে।’
১৯৯১ সালে ইউনেস্কোর ২৬তম সাধারণ অধিবেশনের সুপারিশ অনুসারে ১৯৯৩ সালে জাতিসংঘের সাধারণ সভায় ৩ মে তারিখটিকে বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবসের স্বীকৃতি দেওয়া হয়। এর পর থেকে বিশ্বব্যাপী গণমাধ্যমকর্মীরা দিবসটি পালন করে আসছেন।
সাংবাদিকতার স্বাধীনতা, গণমাধ্যমের মৌলিক নীতিমালা অনুসরণ, বিশ্বব্যাপী গণমাধ্যমের স্বাধীনতার মূল্যায়ন, পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় ক্ষতিগ্রস্ত ও জীবনদানকারী সাংবাদিকদের স্মরণ ও তাদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয় এই দিবসে।
রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স (আরএসএফ) প্রতি বছর ১৮০টি দেশ ও অঞ্চলের মধ্যে থেকে বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম সূচক প্রকাশ করে। আরএসএফের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, তারা ২০০২ সাল থেকে এ সূচক প্রকাশ করছে।