• জাতীয়

    ছুটিতে সিদ্ধান্ত নিন-পদত্যাগ করে সসম্মানে যাবেন নাকি বিতাড়িত হবেন? প্রধানমন্ত্রীকে মির্জা ফখরুল

      মনিরুজ্জামান জুলেট ১৯ অক্টোবর ২০২৩ , ৭:৪২:৩৭ প্রিন্ট সংস্করণ

    সরকারের পদত্যাগ ও নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের এক দফা দাবিতে ফের জোরদার আন্দোলনে নেমেছে বিএনপি। ঢাকাসহ সারাদেশে লাগাতার কর্মসূচির মাধ্যমে নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত করা এবং আন্দোলনে ঢেউ তুলতে সক্ষম হয়েছে দলটি। সর্বশেষ গতকাল রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে লাখো মানুষের জন¯্রােত নেমেছিল বিএনপির জনসভায়। এই জনসভা থেকেই নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আগামী ২৮ অক্টোবর রাজধানীতে মহাসমাবেশ কর্মসূচির মাধ্যমে আন্দোলনের মহাযাত্রা শুরুর ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।

    মির্জা ফখরুল বলেন, আগামী ২৮ তারিখ শনিবার আমরা ঢাকায় মহাসমাবেশ করব। এই মহাসমাবেশ থেকে আমাদের মহাযাত্রা শুরু হবে। ইনশাআল্লাহ তারপরে সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত আমরা আর থেমে থাকব না। অনেক বাধা আসবে, অনেক প্রতিবন্ধকতা আসবে। সমস্ত বাধা-বিপত্তিকে অতিক্রম করে আমাদের জনগণের অধিকার আদায়ের জন্য আমাদেরকে রুখে দাঁড়াতে হবে।

    বিএনপি মহাসচিব বলেন, এই জনসমাবেশের থেকে ঘোষণা, আপনি (প্রধানমন্ত্রী) মেসেজ নিয়ে যান। মানে মানে পদত্যাগ করুন, নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকারের হাতে ক্ষমতা দিন এবং একটা নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন। আমাদের নেতৃবৃন্দ আজকে এখান থেকে পরিষ্কার করে বলে দিয়েছেন, সামনে যে কয়েকটা দিন সময় আছে, এই পূজার ছুটি, এর মধ্যে সিদ্ধান্ত নিন আপনারা কী করবেন। পদত্যাগ করে সসম্মানে ‘সেইফ এক্সিট’ নেবেন নাকি জনগণ দ্বারা বিতাড়িত হবেন? আবার আমি তাদেরকে আহ্বান জানাই, জনগণের ভাবনা বুঝতে পেরে, জনগণের আওয়াজ বুঝতে পেরে আপনারা পদত্যাগ করুন। পদত্যাগ করে শান্তিপূর্ণভাবে জনগণের স্বার্থে একটি নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন, যেটা সম্পূর্ণভাবে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে হবে।

    সরকার পতনের এক দফা দাবিতে গতকাল ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির উদ্যোগে জনসমাবেশে অনুষ্ঠিত হয়। তবে কর্মসূচির আগের রাতে পুলিশের কড়াকড়ির পর ভোর হতেই নয়াপল্টনে আসতে শুরু করেন বিএনপি নেতাকর্মীরা। দলীয় কার্যালয়ের সামনে তৈরি মঞ্চের চারপাশে জড়ো হন তারা। ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন থানা, ওয়ার্ডসহ আশেপাশের জেলাগুলো থেকে বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী খ- খ- মিছিল নিয়ে সমাবেশস্থলে আসেন। সকাল ১০টার মধ্যেই নয়াপল্টন বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের সড়কে লোকে লোকারণ্য হয়ে যায়। বেলা ১২টার মধ্যে নাইটিঙ্গেল মোড় থেকে ফকিরাপুল পর্যন্ত পুরো সড়ক নেতাকর্মীদের জমায়েতে পূর্ণ হয়ে যায়। দুপুর গড়াতেই জনস্রোত শুরু হয় নয়াপল্টনমুখী। বেলা ২টায় সমাবেশ শুরুর আগেই নেতাকর্মীদের ঢল মালিবাগ, কাকরাইল, নাইটিংগেল মোড়, মৎস্যভবন, পল্টন, ফকিরাপুল, মতিঝিল, আরামবাগ, পীর জঙ্গি মোড় পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। বিপুল সংখ্যক মানুষের এই ¯্রােত মূল সড়ক ছাড়িয়ে আশাপাসের সকল অলি-গলিতে ছড়িয়ে পড়ে। এসময় নেতাকর্মীদের সরকারবিরোধী নানা স্লোগানে প্রকম্পিত হয়ে উঠে নয়াপল্টন এলাকা। এদিকে জনস্রোতের কারণে নাইটিংগেল মোড় থেকে মতিঝিল, পল্টন, দৈনিক বাংলা পর্যন্ত সড়কে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এছাড়া সমাবেশে কেন্দ্র করে নয়াপল্টন এলাকায় বিপুল সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়।

    জনসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির মধ্য দিয়ে এই ‘অশান্তি সৃষ্টিকারী, এই ‘সন্ত্রাসী’ আওয়ামী লীগের পতন ঘটাব ইনশাআল্লাহ। এ সময় তিনি শ্লোগান ধরে বলেন, ফয়সালা হবে কোথায়? নেতা-কর্মীরা সমস্বরে বলেন, রাজপথে, রাজপথে।

    সরকার সংবিধান লঙ্ঘন করছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, প্রেসিডেন্ট মো. সাহাবুদ্দিন চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে যাওয়ার আগে কাউকে দায়িত্ব দিয়ে না যাওয়ায় সংবিধান লঙ্ঘন হয়েছে। প্রবীণ এই রাজনীতিবিদন বলেন, সংবিধানে আছে যে, প্রেসিডেন্ট যদি বাইরে যান, তাহলে কাউকে দায়িত্ব দেওয়ার কথা। আজকে এখন পর্যন্ত দেয়নি, দেওয়া হয়নি। অর্থ্যাৎ এখানেও তারা (সরকার) সম্পূর্ণভাবে বেআইনি কাজ করছে, অসাংবিধানিক কাজ করছে, পুরোপুরিভাবে সংবিধান লঙ্ঘন করে যাচ্ছে।

    আগের রাতে দলের সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, তাঁতী দলের আহ্বায়ক আবুল কালাম আজাদসহ নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার নিয়েও কথা বলেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, জনসমাবেশের আগে ২৫০জন নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে। এই থেকে এটাই প্রমাণিত হয় যে, সরকার ভয় পেয়েছে, ভীত হয়েছে এবং তারা কাঁপছে। এত মামলা, এত গ্রেপ্তার, এত নির্যাতন, এত অত্যাচার, তারপরেও কি, আপনাদেরকে দমাতে পেরেছে? নেতাকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে গেছে তাতে কি ভয় পেয়েছেন? মামলা দিয়ে হামলা করে, রেইড করে গ্রেপ্তার করে আর বাংলাদেশের মানুষকে ঠেকিয়ে রাখা যাবে না, এটাই হচ্ছে মূল কথা।”

    দলের ৯৬ জন নেতাকে সাজা দেওয়া হয়েছে জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, তাদের পরিকল্পনা হচ্ছে, যারা আমরা নির্বাচন করতে পারি, এই ধরনের নেতাদের যদি সাজা দিয়ে নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করা যায়, তাহলে তাদের মাঠ পরিষ্কার। সেই আগের মতোই সেইভাবে তারা নির্বাচন করে দিয়ে যাবে।

    আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে অর্থনীতি ‘একেবারে রসাতলে যাবে’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, গত কয়েকদিনে অর্থনীতির কী অবস্থা হয়েছে? রিজার্ভের কী অবস্থা হয়েছে? মেগা প্রকল্পের নামে মেগা দুর্নীতি করে, লুটপাট করে তারা বিদেশে বাড়ি-ঘর তৈরি করেছে। নতুন নতুন করে উদ্বোধন করে আর একটা করে প্রস্তর খ- লাগায়। এই প্রস্তর খ-গুলো টিকবে না। ওটা দিয়ে কোনো লাভ হবে না, জনগণ আর আপনাদের ক্ষমতায় দেখতে চায় না।

    বিএনপি ঢাকা অবরোধ করলে শাপলা চত্বরে ২০১৩ সালের ৫ মের চেয়ে কঠিন পরিণতি হবে বলে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্য নিয়ে প্রতিক্রিয়ায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, আরে ভাই, আমরা কি বলেছি বসে যাব? আমি বলতে চাই, আমাদের বসাবসির কর্মসূচি নেই, আমাদের আন্দোলনের কর্মসূচি আছে। শাপলা চত্বরে নিয়ে যে বক্তব্য রেখেছেন তাতে আপনারা যে হত্যাকা- ঘটিয়েছেন, এটা প্রমাণ হয়ে গেছে। মনে রাখবেন কাদের সাহেব, শাপলা চত্বরের লোকজন আর আমরা এক না।

    ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, এই আওয়ামী লীগ তিন মিনিটে গণতন্ত্র ধ্বংস করে বাকশাল কায়েম করেছিলো। আজকে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের দিকনির্দেশনায় রাজপথে নেমেছি। এই আওয়ামী লীগ কখনই গণতন্ত্রে বিশ্বাস করেনি। এরা জনগণের ইচ্ছাকে পদদলিত করে বার-বার ক্ষমতায় এসেছে। এরা গণপ্রতিনিধিত্বহীন সরকার। আওয়ামী লীগ বলতো আমার ভোট আমি দিবো, যাকে খুশি তাকে দিবো। আজকে তারা কেনো একথা বলে না। তারা এখন বলে দিনের ভোট রাতে দিবো। কারণ তারা দিনে ভোট দিলে ১০ শতাংশ ভোটও পাবে না।
    আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, আজকে সব জায়গায় মানুষের একটি প্রশ্ন- আর কয়দিন? মানুষ আর অপেক্ষা করতে পারছে না। দুর্বিষহ দিন কাটাচ্ছেন তারা। এখনই পদত্যাগ করুন। আলোচনা সমঝোতার কথা আসছে। বিএনপি অবশ্যই আলোচনা সমঝোতায় বিশ্বাস করে। এর আগে অবৈধ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে। তারপরেই বিএনপি আলোচনায় বসতে রাজি। অবৈধভাবে সংবিধান পরিবর্তন করেছে আওয়ামী লীগ। সংবিধানের দোহাই দিয়ে লাভ হবে না। জনগণ রাস্তায় নেমেছে। সরকারের পতন না ঘটিয়ে ঘরে ফিরবে না তারা।

    ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক আবদুস সালামের সভাপতিত্বে ও উত্তরের সদস্য সচিব আমিনুল হক ও দক্ষিণের ভারপ্রাপ্ত সদস্য সচিব লিটন মাহমুদের সঞ্চালনায় সমাবেশে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শাহজাহান ওমর, বরকত উল্লাহ বুলু, শামসুজ্জামান দুদু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ফরহাদ হালিম ডোনার, হাবিবুর রহমান হাবিব, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, কেন্দ্রীয় নেতা সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, হাবিব উন নবী খান সোহেল, শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, ফজলুল হক মিলন, আবদুস সালাম আজাদ, কামরুজ্জামান রতন, মীর সরাফত আলী সপু, রকিবুল ইসলাম বকুল, ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন, যুবদলের সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, স্বেচ্ছাসেবক দলের এসএম জিলানী, মহিলা দলের সুলতানা আহমেদ, ছাত্রদলের সাইফ মাহমুদ জুয়েল, প্রমূখ বক্তব্য দেন।

    আরও খবর

    Sponsered content