• জাতীয়

    সমাবেশ ঘিরে ঢাকার প্রবেশ পথসহ সারাদেশে তল্লাশি ধরপাকড়

      ডেস্ক রিপোর্ট।। ২৭ অক্টোবর ২০২৩ , ৫:২২:০৬ প্রিন্ট সংস্করণ

    সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে রাজধানীর নয়াপল্টনে আগামীকাল শনিবার বিএনপির মহাসমাবেশ ঘিরে ঢাকার প্রবেশপথসহ সারা দেশের বাস-লঞ্চ- ট্রেন টার্মিনালগুলোতে সমানতালে চলছে তল্লাশি-ধরপাকড়। বিরোধী দলের নেতা কর্মী সন্দেহে গ্রেফতার করা হচ্ছে যে কাউকে। ঢাকার প্রবেশমুখগুলোতে চলছে পুলিশ ও র‌্যাবের তল্লাশী। শুধু তা-ই নয় বাসাবাড়ি- মেস ও হোটেলগুলোতে রাতে রাতে তল্লাশী চলছে। এতে করে আতঙ্কে রয়েছেন বিভিন্ন পেশার সাধারণ মানুষ।

    মহাসমাবেশে ঘিরে সারা দেশে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের নতুন, পুরাতন মামলায় গ্রেফতারের হিড়িক পড়েছে। বিএনপির দাবি, মহাসমাবেশ ঘিরে গত ৭ দিনে বিএনপির ১৩ হাজারের বেশি নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে অর্ধ শতাধিক নতুন মামলা হয়েছে। এ ছাড়াও ভয়ভীতি দেখানো, জামিন পাওয়ার পরও অন্য মামলায় গ্রেফতার করা হচ্ছে। অনেককে দুই-তিন দিন বা তারও আগে গ্রেফতার করলেও তা প্রকাশ করছে না পুলিশ। কারাগারে যাওয়ার আগে তারা অনেকে তাদের গ্রেফতারের খবর স্বজনদের জানাতে পারছেন না।সব মিলিয়ে এক আতঙ্কের মধ্যে আছেন নেতাকর্মীরা। তবে পুলিশি ধরপাকড়, সরকারের বাধা ও উসকানি এড়িয়ে ২৮ অক্টোবর ঢাকায় মহাসমাবেশ সফল করতে নির্দেশনা দিয়েছেন হাইকমান্ড।

    তবে গণগ্রেফতারের বিষয়টি অস্বীকার করে ডিএমপির উপ-কমিশনার (মিডিয়া) মো. ফারুক হোসেন বলেন, সুনির্দিষ্ট অভিযোগের বাইরে পুলিশ কাউকে আটক করছে না। যাদের বিরুদ্ধে আদালতের অ্যারেস্ট ওয়ারেন্ট রয়েছে, যারা সন্দেহভাজন বা নিয়মিত মামলার আসামি পুলিশ কেবল তাদের গ্রেফতার করছে। এটি পুলিশের রুটিন ওয়ার্ক। নিরীহ কোনো ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হচ্ছে না।

    এদিকে তবে মহাসমাবেশের বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার হাবিবুর রহমান বলেন, বিএনপির ডাকা কর্মসূচির আড়ালে যদি কেউ সহিংস পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টা করে, ঢাকার সোয়া ২ কোটি মানুষের জানমালের নিরাপত্তা শঙ্কা তৈরি করে, তবে ডিএমপির পক্ষ থেকে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

    পুলিশ বলছে, ২৮ অক্টোবর কয়েকটি রাজনৈতিক সমাবেশ রয়েছে। রাজপথে ত্রিমুখী রক্তক্ষয়ী সংঘাত-সহিংসতায় আশঙ্কা করা হচ্ছে বলে ধারণা করছেন গোয়েন্দারা। তাই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। সন্দেহ হলে তল্লাশি করা হচ্ছে। সমাবেশের নামে পরিস্থিতি খারাপ করলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

    তবে বিএনপি দাবি করেছে, সমাবেশ ঘিরে ঢাকায় যাওয়ার সময় নানা ধরণের হয়রানির মুখে পড়তে হয় তাদের। বিভিন্ন স্থানে পুলিশের চেকপোস্টের মাধ্যমে নেতাকর্মীদের দৈহিক তল্লাশি, মোবাইল ফোন তল্লাশি, আটক, গাড়ি জব্দসহ নানা ধরণের হয়রানি করা হয়। নেতাকর্মীদের যারা সমাবেশে আসতে চাচ্ছে তাদের বাসা-বাড়িতে যাওয়া হচ্ছে, গণপরিবহনকে ওই দিন ঢাকাতে আসতে না করা হচ্ছে, বিএনপির বন্ধু সংগঠনগুলোর নেতাদের হুমকি ধামকি দেয়া হচ্ছে।

    এদিকে গত বুধবার র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন সংবাদ সম্মেলন করে জানিয়েছেন, আগামীকাল শনিবারের রাজনৈতিক দলগুলোর সমাবেশ কেন্দ্র করে ঢাকার প্রবেশপথগুলোতে চেকপোস্ট জোরদার করবে র‌্যাব। যাতে কেউ নাশকতার জন্য আগ্নেয়াস্ত্র বা বিস্ফোরক দ্রব্য নিয়ে ঢাকায় প্রবেশ করতে না পারে। একইভাবে ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ স্থানেও চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি চালাবে র‌্যাব। সমাবেশ কেন্দ্র করেও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। সমাবেশকে কেন্দ্র করে রাজধানীসহ মহাসড়কগুলোতে পেট্রোলিং জোরদার করা হয়েছে। যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য র‌্যাব সব সময় প্রস্তুত।

    এরই ধারাবাহিকতায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ঢাকার প্রবেশ পথ নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে পুলিশ ও র‌্যাবের তল্লাশি চৌকি বসানো হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে নারায়ণগঞ্জের চাষাঢ়া, দুই নম্বর রেলগেট, সাইনবোর্ড, ম-লপাড়া, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জ এলাকায় এসব তল্লাশি চৌকি দেখা যায়।
    সরেজমিনে দেখা যায়, ঢাকার প্রবেশপথ সাইনবোর্ড ও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জ এলাকায় পুলিশের তল্লাশি চৌকি বসানো হয়েছে। তল্লাশি চৌকি থেকে ঢাকাগামী বাসসহ বিভিন্ন যানবাহনে যাত্রীদের জিজ্ঞাসাবাদ ও তল্লাশি করা হচ্ছে। একইসঙ্গে শহরের ম-লপাড়া, দুই নম্বর রেলগেট, চাষাঢ়া এলাকায় পুলিশ ও র‌্যাবের তল্লাশি চৌকি দেখা যায়। যদিও জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) গোলাম মোস্তফা রাসেল জানান, কাউকে হয়রানি করা হচ্ছে না।

    রাজধানীর প্রবেশমুখ আমিনবাজারেও গতকাল চেকপোস্ট বসিয়ে যানবাহনে যাত্রীদের তল্লাশি শুরু করে পুলিশ। সকাল থেকে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের আমিনবাজার ২০ শয্যা হাসপাতালের সামনে চেকপোস্ট বসিয়ে এ তল্লাশি কার্যক্রম শুরু হয়। ঢাকাগামী বিভিন্ন যানবাহন থামিয়ে যাত্রীদের জিজ্ঞাসাবাদ ও ক্ষেত্র বিশেষে তাদের সাথে থাকা ব্যাগপত্র তল্লাশি করছে পুলিশ। এ ক্ষেত্রে ঢাকাগামী দূরপাল্লার বিভিন্ন যাত্রীবাহী বাস, গণপরিবহন, প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস ও মোটরসাইকেলের প্রতি পুলিশের বিশেষ নজর লক্ষ্য করা গেছে। সকাল থেকে সাভার হাইওয়ে থানার পাশে মহাসড়কে চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি ও জিজ্ঞাসাবাদ পরিচালনা করতে দেখা যায় র‌্যাব ও ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের।

    এদিকে ঢাকা ছাড়াও বিভিন্ন জেলায়ও বিএনপি নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার, তাদের বাসায় পুলিশের অভিযান এবং টার্মিনালগুলোতে তল্লাশীর অভিযোগ মিলেছে।

    চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, গতকাল বৃহস্পতিবার ছয় নেতাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বুধবার রাতে হালিশহর থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে ২৫ নম্বর রামপুর ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলী হায়দারকে বাসা থেকে গ্রেফতার করেছে। এছাড়া আকবর শাহ থানার পুলিশ উত্তর পাহাড়তলী ওয়ার্ড বিএনপি নেতা সেলিম উদ্দিন সাল্লু, উত্তর পাহাড়তলী ওয়ার্ড যুবদলের যুগ্ম আহবায়ক শাহাদাত হোসেনকে, ডবলমুরিং থানা পুলিশ কোকো স্মৃতি সংসদের প্রচার সম্পাদক মো. সুমনকে, বাকলিয়া থানা পুলিশ দক্ষিণ বাকলিয়া ওয়ার্ড ছাত্রদল নেতা কাইয়ুম আহমদ জয় ও শওকত হোসেনসহ ৬ জনকে বাসা থেকে গ্রেফতার করেছে। তারা কিন্তু কোন মামলার এফআইআর ভুক্ত আসামি নন।

    যশোর ব্যুরো জানায়, যশোরের চৌগাছায় থানা পুলিশ বিএনপির দুইজন কর্মীকে আটক করে আদালতে পাঠানো হয়েছে। আটককৃতা হলেন,স্বরুপদাহ ইউনিয়নের সাঞ্চডাঙ্গা গ্রামের মাঠ পাড়া এলাকার রমজান আলীর ছেলে গিয়াস উদ্দিন ও একই গ্রামের তোফাজ্জেল হোসেনের ছেলে সোহরব আলী। তারা দুজনই কৃষি কাজ করেন এবং বিএনপির সমর্থক। এদিকে ঝিনাইদহে গ্রেফতার আতঙ্ক বিরাজ করছে।

    নেত্রকোনা জেলা সংবাদদাতা জানান, গত বুধবার রাত ১১টার দিকে নেত্রকোনা জেলা শহরের হোসেনপুরস্থ আন্তঃজেলা বাসস্ট্যান্ড থেকে সদর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক আনোয়ার হোসেন তপন ও গতকাল দুপুরে জারিয়া রেলওয়ে স্টেশন থেকে দুর্গাপুর উপজেলা বিএনপি কর্মী মোজাম্মেল হককে আটক করে পুলিশ।

    কেরানীগঞ্জ (ঢাকা) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, বুড়িগঙ্গা প্রথম সেতুর হাসনাবাদ এলাকায় চেকপোস্ট বসিয়ে ঢাকাগামী সকল প্রকার বাস, মিনিবাস, প্রাইভেটকার ও মোটরসাইকেল থামিয়ে ব্যাপকভাবে সেগুলোতে তল্লাশি চালায় র‌্যাব-১০।

    মুজিবনগর (মেহেরপুর) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে মুজিবনগর উপজেলার আনন্দবাস গ্রামের আসাদুল ময়রার বাড়িতে বৈঠকের সময় ৫ নারী জামাত কর্মীকে আটক করা হয়। নাশকতার মামলায় তাদেরকে আদালতে সোপর্দ করা হয়।

    ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) উপজেলা সংবাদদতা জানান, গত বুধবার রাতে এই অভিযানে ২ জনকে গ্রেফতার করে। আটক বিএনপি নেতা হলেন উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক জুলফিকার আলী ও শিবনগর ইউনিয়ন যুবদলের যুগ্ম আহবায়ক সাবেক ইউপি সদস্য সাজেদুর রহমান সাজু। তাদের নামে কোন মামলা নাই।

    আরও খবর

    Sponsered content