• সারাদেশ

    নওগাঁয় নতুন করে বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি-শতাধিক গ্রাম পানিতে নিমজ্জিত

      মিরু হাসান, স্টাফ রিপোর্টার ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩ , ৬:৪৫:১৭ প্রিন্ট সংস্করণ

    নওগাঁর আত্রাই ও ছোট যমুনাসহ সবকটি নদ- নদীর পানি কমলেও সার্বিক বন্যা প্রস্তুতির আরো অবনতি হয়েছে। আত্রাইয়ের বেড়িবাঁধের ভাঙ্গা অংশ দিয়ে পানি প্রবেশ অব্যাহত থাকায় ওই এলাকার দুটি ইউনিয়নের ৪০টি গ্রাম নতুন করে প্লাবিত হয়েছে। শুক্রবার বিকেল থেকে শনিবার দুপুর পর্যন্ত নতুন করে কয়েকটি এলাকা প্লাবিত হয়ে আরো দুই হাজার বিঘা জমির ধান তলে গেছে। এতে কয়েকদিনে উপজেলায় প্রায় ছয় হাজার বিঘা জমির ধান পানিতে তলে গেছে।ভেসে গেছে শতাধিক পুকুরের মাছ। এতে করে চলতি আমন মৌসুমের উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয় কৃষকরা। এদিকে জেলার আত্রাই উপজেলায় সবচেয়ে বেশি বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে।
    ওই উপজেলার অসংখ্য কাচাঁ ঘরবাড়ি ভেঙ্গে গেছে। বিদ্যুতের খুটি হেলে পড়ায় এলাকা অনেক গ্রামে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। আত্রাই-সিংড়া ও রানীনগরের সাথে সরাসারি সড়ক যোগাযোগও বন্ধ হয়ে পড়েছে।
    আত্রাই উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা জিয়া উদ্দীন আহমেদ জানিয়েছেন ,বুধবার রাতে আত্রাই নদীর ডানতীরের(দক্ষিণ) আত্রাই -সিংড়া সড়কের শিকারপুর ও জগদাস বটতলা নাম স্থানে বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে ফসলের মাঠ ও লোকালয়ে হুহু করে পানি প্রবেশ করছে। একইভাবে বৃহস্পতিবার সকালে আত্রাই নদীর বাম তীরের (উত্তর) কাশিয়াবাড়ির বলরামচক নামক স্থানে সমসপাড়া সড়কের প্রায় ২০ ফুট বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে বিস্তৃর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। বর্তমানে সেই ভাঙ্গা অংশ এখন ২০০ ফুটে এসে দাড়িয়েছে। এতে করে উপজেলার ভোপারা ও মুনিয়ারী ইউনিয়ন সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছ। মুনিয়ারি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সম্রাট হোসেন জানান তার ইউনিয়নের কচুয়া,পালশ, চৌথন, উলাবাড়ি, ধরমপুর, কয়রা, সুলিয়া,মারিয়া,দমদত্তবাড়িয়াসহ অন্তত ত্রিশটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।শতাধিক পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। প্রায় দেড় হাজার বিঘা জমির আমন ফসল তলিয়ে গেছে। ও ভোপাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নাজিম উদ্দিন মন্ডল জানান তার ইউনিয়নের বাঁকা, বলরামচক,শিমুলকুচি,জামগ্রাম ও ভোপারা সহ অন্তত ১০ টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।এসব এলাকার হাজার হাজার মানুষ এখন পানি বন্দী।
    মুনিয়ারী ইউনিয়নের ১০ থেকে ১৫ টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে কয়েক হাজার মানুষ। এসব এলাকায় এখন বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তাপস কুমার পাল জানান,বাঁধ ভেঙ্গে প্রায় ৩শ হেক্টর জমির ধান পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে বলে উল্লেখ করলেও স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন এক থেকে দেড় হাজার হেক্টর জমির আমন ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে। গ্রামবাসীরা বলেন যেভাবে পানি প্রবেশ করেছে তাতে আমানের ফসল আরো তলিয়ে যাওয়ার আশংকা করছেন তাঁরা। এর আগে বুধবার সকালে আত্রাই নদীর নন্দনালী বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে ওই এলাকার কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এছাড়া আত্রাই-বান্দাইখাড়া পাকা সড়কের নন্দনালী সরদারপাড়া তালতলা এলাকায় পাকা সড়ক পানির তোড়ে ভেঙ্গে গেছে। তবে ওই দুইটি ভাঙ্গা বাঁধ মেরামত করা হয়েছে বলে পানি উন্নয়ন র্বোডের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
    আত্রাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সঞ্চিতা বিশ্বাস বলেন,সকাল থেকেই আমরা দূর্গত এলাকায় রয়েছি এবং ভেঙ্গে যাওয়া বাঁধ আটকানোর চেষ্টা করছি। এছাড়া দূর্গতদের জন্য ইতিমধ্যেই ১৬ মেট্রিক টন চাল খাদ্যসহায়তা হিসাবে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
    পানি উন্নয়ন বোর্ড নওগাঁর উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী প্রবীর কুমার পাল বলেন,শুক্রবার থেকে নদীতে পানি কমতে শুরু করেছে। মাঠের ফসল রক্ষায় প্রতিটি ভেঙ্গে যাওয়া বাঁধের সংস্কার কাজ খুব তোরজোর ভাবেই শুরু করা হয়েছে। উপজেলা প্রশাসন,জনপ্রতিনিধি এবং সেচ্ছাসেবকরা সার্বিকভাবে সহযোগিতা করছেন। আবহাওয়া ভাল থাকলে দুই/এক দিনের মধ্যেই সংস্কার কাজ শেষ হতে পারে বলে জানান তিনি।

    আরও খবর

    Sponsered content