• সারাদেশ

    কপিলমুনিতে এবার স্মরণকালের ভয়াবহ চিংড়ি শিল্পে বড় বিপর্যয়

      প্রতিনিধি ৮ নভেম্বর ২০২২ , ১:০৫:০৫ প্রিন্ট সংস্করণ

    এস কে আলীম,কপিলমুনি খুলনা। কপিলমুনির বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে রয়েছে চিংড়ি চাষ। কপিলমুনি অঞ্চল চিংড়ী অধ্যুষিত এলাকা হওয়ায় শতকরা আশি ভাগ মানুষ এ পেশায় জড়িয়ে পড়েছে। দরপতন আর অব্যাহত ভাইরাসের কারনে চিংড়ি চাষীদের এবার পথে বসার উপক্রম হয়েছে। এ অঞ্চলে প্রায় ৮ হাজার হেক্টর জমিতে ছোট বড় মিলে ২/৩ শত মৎস্য ঘের রয়েছে। কোন ঘের ভাইরাস থেকে রক্ষা পাইনি। অধিকাংশ ঘের মালিকরা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নিয়ে মাছ চাষ করেছিল। কিন্তু এ বছর এমন বিপর্যয়ের কারণে ঋণ পরিশোধ করা তো দূরের কথা পোনার দামও উঠাতে পারেনি। প্রান্তিক একজন মৎস্য চাষী জাকারিয়া বলেন, ৭ বিঘা জমিতে একটা এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে চিংড়ি চাষ করেছিলাম কিন্তু আশি দশকের পর থেকে এতটা বিপর্যয় হতে দেখিনি, এবার যে অবস্থা সংসার চালাবো কি করে বা ঋণ শোধ করবো কি করে। অপর এক চাষী তহমিনা জানান, ধার দেনা করে আমার স্বামী দুই বিঘার এই জমিতে মাছের ঘেরটি করছিল, কিন্তু ভাইরাসে সব মাছ মারা গেলে অন্য একটি ঘেরে কর্মচারীর কাজ করার শর্তে টাকা ধারে নিয়ে পোনা ছাড়ে কিন্তু আবারও মাছ মরে সাবাড় হয়ে গেছে, অবশেষে আমার স্বামী সেই মালিকের ঘেরে কর্মচারীর কাজে চলে গেছে এখন আমি নিজেই এই ঘের দেখা শুনা করছি। কিছু নদীর সাদা মাছর পোনা ছাড়া ছিল তাই ধরে ধরে বিক্রয় করছি আর সংসার চালাচ্ছি। হঠাৎ কেন এমন দর পতন জানতে চাইলে কপিলমুনি ডিপো মালিক আলহাজ্ব শেখ রফিকুল ইসলাম বলেন ইউক্রেন ও রাশিয়ায় মাছ বেশি রপ্তানি হত,কিন্তু যুদ্ধের কারণে এসব দেশে এখন মাছ রপ্তানি অনেকাংশ কমে এসেছে। যে কারনে এমন দরপতন। মাত্র দুই মাসের ব্যবধানে বাগদা চিংড়ির দাম কেজিতে ৪শ’ টাকায় নেমে এসেছে । বাগদা চিংড়ির বাজার দর বর্তমানে ১৫ গ্রেড ৭ শত টাকা, যা দু মাস আগে ছিল ১১ শত টাকা, ২০ গ্রেড ৬ শত ৫০ টাকা, যা আগে ছিল ১ হাজার টাকা, ৩০ গ্রেড ৫ শত ৫০ টাকা, যা আগে ছিল ৯ শত টাকা, ৪৪ গ্রেড ৪০০ টাকা, যা আগে ছিল ৬ শত ৫০ টাকা এবং ৬৬ গ্রেড ৪ শত ৫০ টাকা, যা আগে ছিল ৬ শত টাকা। গত দুই মাস ধরে বাগদা চিংড়ির এই অবস্থা চলছে বলে ব্যবসায়ীরা জানান। এদিকে দাম কমে যাওয়ায় ডিপো মালিকরা নগদ অর্থে চিংড়ি কিনতে চাচ্ছেন না। দ্রুত পচনশীল হওয়ায় চাষীরা বাকিতে চিংড়ি বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। উভয় সঙ্কটে চিংড়ি চাষীরা দিশেহারা। ফলে বৈদেশিক বাণিজ্যের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এ চিংড়ি শিল্পে বিপর্যয়ের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। একাধিক ডিপো মালিক চাষীদের কাছ থেকে বাকিতে চিংড়ি কেনার কথা স্বীকার করেছেন। রফতানি কমে যাওয়ায় কোম্পানি মাছ কিনতে চায় না, তাই তারা বাকিতে মাছ কিনতে বাধ্য হচ্ছেন। বাংলাদেশ হিমায়িত খাদ্য রফতানিকারক এ্যাসোসিয়েশন (বিএফএফইএ) দাবি করেছে, আন্তর্জাতিক বাজারে বাগদা চিংড়ির দাম ও চাহিদা কমে যাওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। কবে নাগাদ চিংড়ির বাজার স্বাভাবিক হবে তা নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা।

    আরও খবর

    Sponsered content