অনলাইন ডেস্ক ১৮ অক্টোবর ২০২৩ , ২:১৮:১৯ প্রিন্ট সংস্করণ
নেদারল্যান্ডস যেনো এক আতঙ্কের নাম দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে। গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে সবাইকে অবাক করে দিয়েছিল তরা। সঙ্গে বিদায়ও করে দিয়েছিল বিশ্বকাপ থেকে। এবার চলতি ওয়ানডে বিশ্বকাপে নিজেদের তৃতীয় ম্যাচে তারা দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে অঘটনের জন্ম দিলো।
চলতি বিশ্বকাপে আরও একটি অঘটনের সাক্ষী হলো পুরো ক্রিকেট বিশ্ব। দুই দিন আগেই বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডকে হারিয়ে বিশ্বকাপে অঘটনের জন্ম দিয়েছিল আফগানিস্তান। আর আজ বিশ্বকাপে নিজেদের তৃতীয় ম্যাচে শক্তিশালী দক্ষিণ আফ্রিকাকে ৩৮ রানে হারিয়ে অঘটনের জন্ম দিলো ডাচরা।
নেদারল্যান্ডসের দেওয়া ২৪৬ রানের লক্ষে ব্যাট করতে নেমে মাত্র ৪৪ রানেই ৪ উইকেট হারায় দক্ষিণ আফ্রিকা। এরপর ডেভিড মিলার, জেরাল্ড কোয়েটজি ও কেশব মহারাজ দলের হাল চেষ্টা করেন কিন্তু ব্যর্থ হন। ডাচ বোলারদের বোলিং তোপে শেষ পর্যন্ত নির্ধারিত ৪২ ওভার ৫ বলে সব উইকেট হারিয়ে ২০৭ রান তুলতে সক্ষম হয় প্রোটিয়ারা। আর ডাচরা তুলে নেয় ৩৮ রানের জয়।
বৃষ্টির কারণে খেলা দেরিতে শুরু হওয়ায় কমানো হয় সাত ওভার। যার ফলে আজকে ৪৩ ওভার খেলার সুযোগ পায় দুই দলই। প্রোটিয়াদের হয়ে আজ ওপেনিংয়ে নামেন কুইন্টন ডি কক ও টেম্বা বাভুমা। কিন্তু দলীয় মাত্র ৩৬ রানেই সাজঘরে ফিরে যান আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান কুইন্টন ডি কক। ২২ বলে বলে ২০ রান করে কলিন অ্যাকারম্যানের শিকার হয়ে ফিরে যানপ্যাভিলিয়নে। তার বিদায়ে ৩৬ রানেই ভাঙে প্রোটিয়াদের ওপেনিং জুটি।
এরপর দলীয় ৩৯ রানে আউট হন বাভুমা। রোয়েলফ ভ্যান ডের মেরওয়ের বলে বোল্ড হওয়ার আগে তিনি ৩১ বলে ১৬ রান করেন। দলীয় ৪২ রানে সাজঘরে ফিরে যান আগের ম্যাচে হাফ সেঞ্চুরি করা এইডেন মার্করাম। পল ভ্যান মিকেরেনের বলে বোল্ড হওয়ার আগে তিনি করেন ১ রান।
তার বিদায়ের পর রোয়েলফ ভ্যান ডের মেরওয়ের দ্বিতীয় শিকার হযে ফিরে যান রাসি ভ্যান ডের ডুসেন। ৭ বলে ৪ রান করে তিনি ফিরে যান প্যাভিলিয়নে। তার বিদায়ে ৪৪ রানেই ৪ উইকেট হারায় প্রোটিয়ারা।
৪৪ রানে ৪ উইকেট হারানোর পর দলের হাল ধরেন হেনরিখ ক্লাসেন ও ডেভিড মিলার। এই জুটি থেকে আসে ৪৫ রান। কিন্ত দলীয় ৮৯ রানে হেনরিখ ক্লাসেনের বিদায়ে ভেঙে যায় এই জুটি। ২৮ বলে ২৮ রান করেন তিনি।
হেনরিখ ক্লাসেনের বিদায়ের পর মার্কো জ্যানসেনের সঙ্গে জুটি বাঁধেন ডেভিড মিলার। কিন্তু মার্কো জ্যানসেনও বেশি সময় থাকতে পারেননি ক্রিজে। মাত্র ২৫ বলে মাত্র ৯ রান করে ফিরে যান তিনি।
হাফ সেঞ্চুরির আশা জাগিয়ে ৪৩ রানে সাজঘরে ফিরে যান ডেভিড মিলার। ৫২ বলে ৪৩ রান করে লোগান ভ্যান বেকের শিকার হয়ে ফিরে যান সাজঘরে।
ডেভিড মিলারের পথ ধরে জেরাল্ড কোয়েটজিও ফিরে যান প্যাভিলিয়নে। ২৩ বলে ২২ রান করে ফিরে যান তিনি।
১৪৭ রানে ৮ উইকেট যাওযার পর শেষের দিকে কাগিসো রাবাদার ৯ রান, কেশব মহারাজের ৪০ রান আর লুঙ্গি এনগিডির অপরাজিত রান শুধু হারের ব্যবধানটাই কমাতে পেরেছে। শেষ পর্যন্ত নির্ধারিত ৪৩ ওভারে সব ২০৭ করতে সক্ষম হয় প্রোটিয়ারা। আর ডাচরা ৩৮ রানের জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে।
এর আগে নেদারল্যান্ডের হয়ে আজ ওপেনিংয়ে নামেন বিক্রমজিৎ সিং ও ম্যাক্স ও’ডাউড। তবে এই জুটি বেশি সময় থাকেত পারেনি ক্রিজে। দলীয় মাত্র ২২ রানেই ভেঙে যায় এই জুটি। ১৬ বলে ২ রান করা বিক্রমজিৎ সিং কাগিসো রাবাদার শিকার হয়ে ফিরে গেলে মাত্র ২২ রানেই ভেঙে যায় নেদারল্যান্ডসের ওপেনিং জুটি। বিক্রমজিৎ সিংয়ের বিদায়ের পর আরেক ওপেনার ম্যাক্স ও’ডাউডও বেশি সময় থাকতে পারেনি ক্রিজে। মার্কো জ্যানসেনের শিকার হয়ে তিনিও ফিরে যান সাজঘরে। আউট হওয়ার আগে করেন ২৫ বলে ১৮ রান। তার বিদায়ে ২৫ রানেই ২ উইকেট হারায় ডাচরা। এই দুই ওপেনারের বিদায়ের পর জুটি গড়েন কলিন অ্যাকারম্যান ও বাস ডি লিডি। এই জুটি দলকে বিপর্যয় থেকে বাঁচানোর চেষ্টা করে। কিন্তু ৭ বলে ২ রানে করে বাস ডি লিডির বিদায়ে ভেঙে যায় এই জুটি। কাগিসো রাবাদার বলে এলবিডব্লিউয়ের শিকার হয়ে পিরে যান তিনি। তার বিদায়ে ৪০ রানেই ৩ উইকেট হারায় নেদারল্যান্ডস।
বাস ডি লিডির পর দলীয় ৫০ রানে কলিন অ্যাকারম্যানও ফিরে যান সাজঘরে। ২৫ বলে ১২ রান করে জেরাল্ড কোয়েটজির শিকার হয়ে পিরে যান তিনি। কলিন অ্যাকারম্যানের বিদায়ের পর সাইব্র্যান্ড এঙ্গেলব্রেখ্ট জুটি গড়েন তেজা নিদামানুরুর সঙ্গে। এই জুটিতে ভর করে ঘুরে দাঁড়াতে চেষ্টা করে ডাচরা। কিন্তু ৩৭ বলে ১৯ রান করে সাইব্র্যান্ড এঙ্গেলব্রেখ্ট সাজঘরে ফিরে গেলে ভেঙে যায় এই জুটি। এই জুটি থেকে আসে ৩২ রান। দলীয় ৮২ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে খাদের কিনারে দাঁড়ানো নেদারল্যান্ডসকে টেনে তোলার চেষ্টা করেন স্কট এডওয়ার্ডস ও তেজা নিদামানুরু। কিন্তু এই জুটিও খুব বেশি রান করতে পারেনি। দলীয় ১১২ রানে তেজা নিদামানুরুর বিদায়ে ভেঙে যায় এই জুটি। ২৫ বলে ২০ রান করা তেজা নিদামানুরু মার্কো জ্যানসেনের শিকার হয়ে ফিরে যান। তার বিদায়ে দলীয় ১১২ রানেই ৬ উইকেট হারায় ডাচরা।
১১২ রানে ৬ উইকেট হারানো ডাচদের বাঁচানোর দায়িত্বটা একা হাতে সামলান স্কট এডওয়ার্ডস। তিনি আজ তুলে নেন ব্যক্তিগত অর্ধশতক। ৫৩ বলে তুলে নেন ৫০ রান। তিনি এক প্রান্ত আগলে রাখলেও অন্য প্রান্তে তখন আসা যাওযার মিছিল। দলীয় ১৪০ রানে ফিরে যান লোগান ভ্যান বেক। ২৭ বলে ১০ রান করেন তিনি। তার বিদায়ের পর ১৯ বলে ২৯ রানেই ঝোড়ো উনিংস খেলা রোয়েলফ ভ্যান ডের মেরওয়েও ফিরে যান সাজঘরে। এরপর আরিয়ান দত্তকে নিয়ে নির্ধারিত ৪৩ ওভার পর্যন্ত খেলা শেষ করে মাঠ ছাড়েন স্কট এডওয়ার্ডস। তিনি অপরাজিত থাকেন ৭৮ রানে। আর আরিয়ান দ্ত্ত অপরাজিত থাকেন ৯ বলে ২৩ রান করে।