মোঃ আবুল বাসার নির্বাহী সম্পাদক ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ , ১:০৭:১৭ প্রিন্ট সংস্করণ
উজ্জ্বল কুমার সরকারঃআজ ২১ সেপ্টেম্বর কথাসাহিত্যিক পূরবী বসু এর ৭৬তম জন্মদিন। তিনি একজন বাঙালি বিজ্ঞানী ও নারীবাদী গল্পকার, প্রাবন্ধিক, কবি ও ঔপন্যাসিক। আজ তার জন্মদিন। পূরবী বসু ১৯৪৯ সালের ২১ সেপ্টেম্বর তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের (বর্তমান বাংলাদেশ) মুন্সিগঞ্জ জেলায় এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা ছিলেন মুন্সিগঞ্জের একজন নামকরা চিকিৎসক। তিন বোনের মধ্যে তিনি সবার ছোট। চতুর্থ শ্রেণিতে পড়াকালীন তার লেখা একটি গোয়েদা গল্প দেয়াল পত্রিকায় ছাপা হয়। ছোটবেলা থেকে বঙ্কিম রচনাবলী, শরৎচন্দ্র রচনাবলী পড়তেন। বাবার উৎসাহে লেখালেখি শুরু করেন। মুন্সিগঞ্জের একটি স্থানীয় দৈনিক পত্রিকায় কচি কাঁচার আসর, সাত ভাই চম্পা, খেলাঘর ইত্যাদি ছোটদের পাতায় লিখতে থাকেন। ধীরে ধীরে বড়দের পাতায় ও বিভিন্ন সাময়িকীতে লেখা শুরু করেন। ১৯৫৯ সালে আহসান হাবীব সম্পাদিত তৎকালীন দৈনিক পাকিস্তানের (বর্তমান দৈনিক বাংলা) সাহিত্য পাতায় তার গল্প ছাপা হয়। পূরবী ম্যাট্রিক পাস করেন মানবিক শাখায়। ইন্টারমিডিয়েটে পড়েছেন বিজ্ঞান শাখায়।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফার্মেসি বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। পরে উচ্চশিার জন্য পাড়ি জমান যুক্তরাষ্ট্রে। সেখানে তিনি মেডিক্যাল কলেজ অভ পেনসিলভ্যানিয়া থেকে প্রাণ-রসায়নে স্নাতকোত্তর ও ইউনিভার্সিটি অভ মিসৌরি থেকে পুষ্টিবিজ্ঞানে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। তারপর পোস্ট ডক্টরাল গবেষণা করেছেন এবং পেয়েছেন গবেষণা বৃত্তি। এছাড়া বেশ কিছু খ্যাতনামা জার্নালে তার লেখা আর্টিকেল ছাপা হয়েছে।
সাহিত্যে অবদানের জন্য তিনি ২০০৫ সালে অনন্যা সাহিত্য পুরস্কার ও ২০১৪ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার লাভ করেন। পূরবী বসু ১৯৬৭ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর একুশে পদক বিজয়ী সাহিত্যিক জ্যোতি প্রকাশ দত্তের সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। জ্যোতি প্রকাশের সাথে তার পরিচয় হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের অধ্যাপক শহীদ গোবিন্দ চন্দ্র দেবের সেক্রেটারিয়েট রোডের বাসায়। পরিচয় থেকে প্রণয়। জ্যোতি প্রকাশ উচ্চশিার জন্য যুক্তরাষ্ট্র যাওয়ার আগে পূরবীকে বিয়ে করেন। বিয়ে হয় পূরবীর গ্রামের বাড়ি মুন্সিগঞ্জে। তাদের এক মেয়ে ও এক ছেলে। মেয়ে জয়ীষা রাগিনী দত্ত ও ছেলে দীপন রাগ দত্ত। ছোটবেলা থেকে লেখালেখি শুরু করলেও তার প্রথম বই পূরবী বসুর গল্প ১৯৮৯ সালে প্রকাশিত হয় সমবায় প্রকাশনী থেকে। তার গল্প ও প্রবন্ধে লিখেছেন সমাজের অবহেলিত ও নিপীড়িত মানুষের কথা এবং ধর্মীয় সংখ্যালঘু ও দরিদ্র জনগণের বিবরণ। ২০১৩ সালে তার প্রবন্ধ প্রাচ্য পুরাণ ও প্রাচ্যে পুরাতন নারী প্রকাশিত হয়। এই বইতে রয়েছে ১৩টি প্রবন্ধ। প্রবন্ধগুলোতে রয়েছে ১৮টি পুরাণ ও উপপুরাণসহ প্রাচ্যের রূপকথা ও উপকথার নারী চরিত্রের বর্ণনা ও তাদের ঘটনাবলী। বেঙ্গল পাবলিকেশন্স থেকে প্রকাশিত হয় তার রচিত আমার এ দেহখানি। বইটি লিখেছেন পুরুষ ও পুরুষতন্ত্র, মাতৃত্ব ও নারী পুরুষের সৃষ্টির রহস্য নিয়ে। তার প্রথম উপন্যাস অবিনাশী যাত্রা ২০১৪ সালে প্রকাশিত হয় অন্য প্রকাশ থেকে। এই উপন্যাসে তিনি একজন নারীর প্রবাসে একাকী বেঁচে থাকার সংগ্রাম তুলে ধরেছেন।
আজ তাঁর জন্মদিনে জানাই গভীর শ্রদ্ধা।